2001 সালের এই দিনে ভারতীয় বিএসএফ বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্প সহ আশপাশের এলাকা দখলে নিতে রাতের আধারে (ভোর রাতে) পূর্ব ঘোষণা এবং স্থান নির্ধারণ ছাড়াই কাপুরুষের মত অতর্কিতে হামলা চালায়। তৎকালীন BDR [বর্তমান BGB] এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয় এবং বিজয় অর্জন করে।
২০০১ সালের এই দিনে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফরা কোন প্রকার কারণ ছাড়াই অতর্কিতে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের ভূখন্ডে। ১০৬৭/৩ পিলার অতিক্রম করে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী বিডিআর ক্যাম্পের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে। বড়াইবাড়ী বিডিআর ক্যাম্পসহ আশপাশের গ্রাম তাদের দখলে নিতে এ বর্বরোচিত আক্রমণ মিশন ছিল তাদের।
বাংলাদেশী ভূখন্ডে হানাদার বিএসএফ বাহিনীর গুলীতে শহিদ হয় ২ বিডিআর জোয়ান। অপরদিকে বিএসএফ অফিসারসহ নিহত হয় ১৬ জন সদস্য। বিএসএফ বাহিনী পুড়িয়ে দেয় শতাধিক ঘরবাড়ি। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় কোটি টাকার সম্পদ। ১৮ এপ্রিল ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী দিবস হিসাবে পালিত হয়।

কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে রৌমারী উপজেলা শহর ৪৫ কি.মি. দূরে। তাও আবার ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। রৌমারী উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ পূর্ব দিকে ১০ কি.মি. দূরে বড়াইবাড়ী গ্রাম। ভারতের আসাম সীমান্তের ২২৬ একর জমি নিয়ে বড়াইবাড়ী গ্রাম যার আন্তর্জাতিক পিলার নম্বর ১০৬৭- ৪ এস।
ঘটনার দিন ১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বড়াইবাড়ী বিওপিতে ডিউটিতে ছিলেন মাত্র ১১ জন বিডিআর। ভোর ৫টার দিকে সীমান্তের ওপার থেকে আসা ভারী অস্ত্রে সুসজ্জিত বিএসএফ বাহিনী স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক লালমিয়াকে সামনে পেয়ে বড়াইবাড়ী বিডিআর ক্যাম্পের কথা জানতে চাইলে সুচতুর লাল মিয়া ক্যাম্পের পরিবর্তে ক্যাম্প সদৃস্য একটি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে দেয়। বিএসএফ সদস্যরা বিডিআর ক্যাম্প ভেবে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগুতে থাকে সেদিকে।
এরেই ফাঁকে লাল মিয়া দৌড়ে গিয়ে বড়াইবাড়ী ক্যাম্পের বিডিআর জোয়ানদের খবর দেয়। বিডিআর জোয়ানরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
ধারণা করা হয় ১৬ এপ্রিল সিলেটের পাদুয়া অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে দখল করতে গিয়ে বিডিআর জোয়ানদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে শোচনীয় পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই তারা এ আক্রমণ চালায়। শহিদ ৩ বিডিআর এর স্মৃতি স্তম্ভটি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সালে বড়াইবাড়ী ক্যাম্পে উদ্বোধন করা হয়।

এই যুদ্ধ ৪২ ঘণ্টাব্যাপী চলে। বিএসএফ এর তাণ্ডবে পুড়ে ছাই হয়েছিল বড়াইবাড়ী গ্রামের ৮৯টি বাড়ি। সরকারি হিসেবে মোট ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ টাকা। যুদ্ধে বিডিআর এর ২জন সৈন্য নিহত এবং ৬ জন আহত হন। শহিদদের মধ্যে একজন ৩৩ রাইফেলস ব্যাটালিয়ানের সৈনিক ল্যান্স নায়ক ওয়াহিদ মিয়া অন্যজন হলেন সিপাহী মাহফুজ ২৬ রাইফেলস ব্যাটালিয়ানের সিপাহী আব্দুল কাদের। অপরদিকে ভারতের ১৬ জন বিএসএফ নিহত এবং ২ জন আত্মসর্মপণ করে। পরে কামালপুর সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশ ও গ্রেফতারকৃতদের ফেরত দেয়া হয়। ২১ এপ্রিল বড়াইবাড়িতে ১০৬৭নং পিলারের নিকট পতাকা বৈঠকের জন্য বিডিআর চিঠি দেয় বিএসএফকে। পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল শায়রুজ্জামান। বিডিআরের সেই ১০ জন অফিসারদের বীরসেনানী সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
Reference – Wikipedia