বলে রাখা ভালো, এটা টোটালি আননেসেসারি ইন্টার ভিলেজ ওয়ারফেয়ার। একজনের পায়ের সাথে অন্যজনের পা লাগায়, ফুটবলে জোরে শট দেয়ায়, পূর্ণিমার বয়স কম না বেশি, একজনের এলাকায় অন্যজন গান গাওয়ায়, চায়ের কাপে চা কম দেয়ায়, হাঁটার, তাকানোর ভঙ্গি পছন্দ না হওয়ার মত অতি তুচ্ছ কারণে যেকোন সময় দুই গ্রামের মাঝে এই যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে।
প্রথমে বর্ডার কনফ্লিক্টের মত ছোট আকারে সংঘর্ষ হয়। এরপর উভয় পক্ষ বিপুল পরিমান ম্যানপাওয়ার ডেপ্লয় করে। যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে তারা বিশাল ফসলি জমি কিংবা খোলা ময়দান বেছে নেয়। এইচ আওয়ারের পূর্ব মুহুর্তে নারী পুরুষ নির্বিশেষে দলে দলে হাজার হাজার লোক বর্শা, টেটা, লম্বা লাঠি, দা, কুড়াল নিয়ে সমাবেত হতে থাকে। মিত্রবাহিনীর রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে আশপাশের দু চার গ্রামের মানুষও এসে যোগ দেয় দুই পক্ষে। এরপরই ইনফ্যান্ট্রি, আর্টিলারি এমনকি স্পেশাল ফোর্স পর্যায়ে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথম ধাপে প্রচলিত যুদ্ধের নিয়মে আর্টিলারি হামলার মত টেটা নিয়ে এবং ইট পাটকেল নিয়ে আক্রমণ করে প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ড ফাইটিং ইউনিটকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

যখনই তারা একটু পিছিয়ে ডিফেন্সিভ পজিশনে যায় তখনই ইনফ্যান্ট্রিরা মূলত লাঠি, বল্লম নিয়ে আক্রমণ জোরালো করে। কখনো আবার কাউন্টার এটাক হয়। এদের মাঝেই একদল আছে যারা স্পেশাল ফোর্সের ভূমিকায় থাকে। দুই পক্ষই তাদের ভাড়া করে আনে। আধুনিক স্পেশাল ফোর্স কোম্পানি যেরকম সাধারণ সেনা কোম্পানি থেকে আকারে ছোট হয় ঠিক তেমনই এদের দলও আকারে ছোট হয়। দশ থেকে পনেরো কিংবা বিশজনের হয়ে থাকে। এ দলের সবাই শার্প শুটার। টার্গেটে বল্লম নিক্ষেপে বিশেষ পারদর্শী।
কয়েকশো বছর ধরে চলছে এই ঐতিহ্যবাহী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। এটিকে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বর্বর গ্রাম্যমানুষেরা আত্মসম্মান, মর্যাদা রক্ষার দৃষ্টিতেই দেখে। স্বচক্ষে এই যুদ্ধ দেখলে মনে হবে এই অঞ্চলে সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি

স্পেশাল ফোর্স হওয়ায় তারা মুখ বেঁধে পরিচয় গোপন রাখে এবং সুরক্ষার জন্য মোটরসাইকেলের হেলমেট পরিধান করে। তারা কখনো সামনে থেকে আক্রমণ করে আবার কখনো হিট এন্ড রান পদ্ধতিতে প্রতিপক্ষের প্রচুর ক্যাজুয়ালিটি ঘটায়। এভাবেই চলতে থাকে এটাক কাউন্টার এটাক। জাতিসংঘের ভুমিকায় পুলিশ আসে। ক্ষমতাধর দুই রাষ্ট্রের যুদ্ধে যেমন জাতিসংঘের নাক গলানো মানা এই যুদ্ধেও যেন তাই। তবুও পুলিশ বাধা দেয়। যুদ্ধে জাতিসংঘ কর্মী হতাহত হবার মতই আহত হয় পুলিশ। এরপর পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে যুদ্ধ বিরতির আহবান জানায়। দুইদল ডিফেন্স লাইনে ফিরে যায়। পুলিশ মাইক নিয়ে সবাইকে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করতে বলে এবং কখনো কখনো ১৪৪ ধারা জারি করে দেয়।
হতাহতদের চিকিৎসা দেয়া হয়, নিহতদের পুলিশ নিয়ে যায়৷ দুইপক্ষ যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করলেও উভয়পক্ষই টানা কয়েক দিন স্ট্যান্ডবাই থাকে আরো একটা এটাকের জন্য।

এভাবেই কয়েকশো বছর ধরে চলছে ঐতিহ্যবাহী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। এটিকে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বর্বর গ্রাম্য মানুষেরা আত্মসম্মান, মর্যাদা রক্ষার দৃষ্টিতেই দেখে। স্বচক্ষে এই যুদ্ধ দেখলে মনে হবে এই অঞ্চলে সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি। বিশ্ব যেখানে করোনায় পর্যদুস্ত, ব্রাহ্মনবাড়িয়া সেখানে অতি তুচ্ছ কারণে উত্তপ্ত।
By Himel Rahman
Courtesy – Defence Research Forum- DefRes-